ইসলামে নবী আদম ও হাওয়া (আরবি: হাওয়া) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যেমনটি তারা অন্যান্য আব্রাহামিক ধর্মেও। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, তারা প্রথম মানব ও মানবী, যাদের আল্লাহ সৃষ্টি করেছিলেন এবং যাদের থেকে মানবজাতির সূচনা হয়। তাদের কাহিনি কেবল সৃষ্টির নয়, বরং অবাধ্যতা, ইচ্ছাশক্তি ও অনুশোচনার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। নিচে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে আদম ও হাওয়ার কাহিনি আলোচনা করা হয়েছে—তাদের জান্নাতে জীবন ও পৃথিবীতে আগমন।
ইসলামে নবী আদম (আঃ) হলেন প্রথম মানব, যাকে আল্লাহ্ কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন। আল্লাহ তাকে গঠন করে তাঁর রূহ ফুঁকে দেন এবং তাকে জ্ঞান ও বুদ্ধি দান করেন। তিনি আদমকে সমস্ত জিনিসের নাম শিখিয়ে দেন, যা মানব জাতিকে একটি বিশেষ মর্যাদায় স্থান দেয়।
আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
"এবং স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন: আমি মাটি থেকে এক মানব সৃষ্টি করব... এবং তিনি আদমকে সমস্ত নাম শিখালেন।" ২:৩১
আদমের বিশেষ জ্ঞান ও সৃষ্টিকে সম্মান জানাতে ফেরেশতাদের সিজদার আদেশ দেন আল্লাহ। সবাই সিজদা করেন, কিন্তু ইবলিস (শয়তান) অহংকারের কারণে অমান্য করে এবং জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়।
আদম (আঃ)-এর সঙ্গী হিসেবে আল্লাহ হাওয়াকে সৃষ্টি করেন। ইসলামে হাওয়া হলেন প্রথম নারী ও আদমের সমান সঙ্গিনী। কুরআনে কোথাও বলা হয়নি যে হাওয়া আদমের পাঁজর থেকে সৃষ্টি হয়েছিলেন, বরং বলা হয়েছে যে তাঁরা একই সত্তা থেকে সৃষ্টি হয়েছেন।
"তিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তির মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার মধ্য থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন।" ৪:১
এই আয়াত পুরুষ ও নারীর সমানতা এবং তাদের একতা নির্দেশ করে। জান্নাতে তারা একত্রে আল্লাহর নিয়ামত উপভোগ করতেন।
আদম ও হাওয়া জান্নাতে বসবাস করতেন এবং সকল কিছু খাওয়ার অনুমতি ছিল, এক গাছ ছাড়া। এই গাছটি তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ ছিল। আল্লাহ সতর্ক করেছিলেন—যদি তারা ওই গাছে ঘনিষ্ঠ হয়, তবে তারা জুলুমকারী হবে।
"আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং যা কিছু ইচ্ছা খাও, তবে এই গাছের নিকটবর্তী হয়ো না, নচেৎ তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।" ২:৩৫
ইবলিস তাদের ধোঁকা দেয় এবং বলে, গাছের ফল খেলে তারা অমর হবে। তারা সেই গাছ থেকে খায় এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে।
নিষিদ্ধ গাছ থেকে খাওয়ার পর তারা নিজেদের নগ্নতা অনুভব করেন ও লজ্জিত হন। আল্লাহ তাদেরকে ভর্ৎসনা করেন। তারা অনুতপ্ত হন এবং ক্ষমা চান। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন, কিন্তু জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।
"তখন শয়তান তাদেরকে সেখানে থেকে পদস্খলিত করল এবং যেখানে তারা ছিল সেখান থেকে তাদের বের করে দিল। আমি বললাম: তোমরা সবাই নিচে নেমে যাও, একে অপরের শত্রু হবে এবং পৃথিবীতে তোমাদের জন্য কিছু সময়ের জন্য বাসস্থান ও রিযিক রয়েছে।" ২:৩৬
ইসলামে এটি ‘মূল পাপ’ নয়, বরং মানুষের ভুলের স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে দেখা হয়। প্রতিটি শিশু নিষ্পাপ জন্মগ্রহণ করে এবং আল্লাহ অনুতপ্তদের ক্ষমা করেন।
আদম (আঃ) ছিলেন প্রথম নবী ও মানবজাতির পিতা। তিনি আল্লাহর বার্তা বহন করেন ও তাঁর সন্তানদের তাওহীদের দিকে আহ্বান করেন। হাওয়া (আঃ) নারী হিসেবে তার সমান অংশীদার, যিনি মানবজাতির মা এবং আল্লাহর এক গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি।
তাদের কাহিনি শিক্ষা দেয়: অবাধ্যতা ক্ষতিকর, অনুশোচনা দরকারি এবং আল্লাহর রহমত সর্বদা উন্মুক্ত।
আদম ও হাওয়ার ঘটনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লিখিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলো হলো:
এই আয়াতগুলো আল্লাহর দয়া, অনুতাপের গুরুত্ব এবং মানুষের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।