নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম) ইসলাম ধর্মে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে পরিগণিত। তিনি একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠায় এবং ইসলামী বিশ্বাসের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জীবন, যাঁর মধ্যে নানা পরীক্ষা, ত্যাগ এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস ছিল, কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা। কারণ, ইবরাহিম (আলাহি সালাম) তিনটি আব্রাহামিক ধর্মের মধ্যে এক পিভটাল ব্যক্তিত্ব। নিচে, আমরা ইসলামে নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর জীবন, তাঁর প্রধান পরীক্ষাগুলি এবং তাঁর অব্যাহত উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনা করব।
নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম) ইসলাম ধর্মে উলুল আজম (পাঁচ শ্রেষ্ঠ নবী) হিসেবে বিবেচিত। তিনি আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহিদ) প্রতিষ্ঠার জন্য এবং একেশ্বরবাদ প্রচারের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত।
কোরআন ও হাদীসে নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর গল্পে তাঁর আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর ধৈর্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক polytheistic সমাজে জন্ম নেওয়া, ইবরাহিম (আলাহি সালাম) একটি মূর্তিপূজক পরিবারে বড় হন। তবুও, তিনি একমাত্র আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাঁর জনগণের পূজিত মূর্তিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। মূর্তি পূজা না করার কারণে, তিনি তাঁর সময়ের রাজা, নমরুদ, যিনি একজন অত্যাচারি এবং একেশ্বরবাদ বিরোধী ছিলেন, তাঁর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন।
কোরআনে আল্লাহ বলেন:
"যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর জাতিকে বললেন, 'তোমরা কী পূজা করো?' তারা বলল, 'আমরা মূর্তিপূজা করি এবং আমরা তাদের প্রতি নিবেদিত থাকি।'" 37:89
বিদ্রূপ ও নির্যাতনের মুখেও, ইবরাহিম (আলাহি সালাম) আল্লাহর প্রতি তাঁর বিশ্বাস অটুট রেখেছিলেন এবং মানুষকে একমাত্র সঠিক আল্লাহর প্রতি আস্থা স্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর জীবন বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে চিহ্নিত যা তাঁর বিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে। এই পরীক্ষাগুলি শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক উভয়ই ছিল এবং তারা বিশ্বাসীদের জন্য শক্তিশালী পাঠ হিসেবে কাজ করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে:
"এবং যখন তাঁর পুত্র তাঁর সাথে কাজ করার বয়সে পৌঁছাল, তিনি বললেন, 'হে আমার পুত্র, নিশ্চয়ই আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমাকে তোমাকে কোরবানি দিতে হবে, তুমি কি মনে করো?' সে বলল, 'হে আমার বাবা, আপনি যা আদেশ দিয়েছেন, তা করুন; আল্লাহ চান, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।'" 37:102
নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর অবিচলিত বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং একেশ্বরবাদ প্রচারের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি ইসলামিক ঐতিহ্যে একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে গেছে। তাঁকে একজন ধার্মিক ও আনুগত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পূজা করা হয়। কোরআনে ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-কে "খালিলুল্লাহ" (অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধু) হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, কারণ তাঁর আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক এবং আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য ছিল।
নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর উত্তরাধিকার ইসলামের অনুশীলনগুলিতেও জীবিত থাকে, বিশেষ করে হজের রীতিতে, যেখানে মুসলিমরা ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর জীবনকালীন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলিকে পুনরায় মঞ্চস্থ করেন। হজের সময় মিনার স্তম্ভগুলোতে পাথর নিক্ষেপ করা ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর শয়তানকে প্রতিহত করার স্মৃতি যা সে তাঁকে আল্লাহর আদেশ থেকে বিরত করতে চেয়েছিল। ঈদুল আজহায় একটি পশু কোরবানি দেওয়া ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি স্মরণ করে এবং কাবা নির্মাণ আজও ইসলামী উপাসনায় একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম) আব্রাহামিক ধর্মগুলোর মধ্যে একটি প্রধান চরিত্র। তিনি একমাত্র আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং মূর্তিপূজার প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে ইহুদী, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। কোরআনে আল্লাহ ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-কে বিশ্বাসীদের জন্য একটি আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এবং তাঁর গল্প মুসলিমদের ধৈর্য, আল্লাহর প্রতি আস্থা এবং সৎ পথে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করে।
কোরআনে নবী ইবরাহিম (আলাহি সালাম)-এর বহু জায়গায় উল্লেখ রয়েছে, যেখানে তাঁকে গভীর বিশ্বাসী, এক নবী এবং মানবতার পথপ্রদর্শক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তাঁর জীবন এবং পরীক্ষাগুলির বর্ণনা বিভিন্ন সূরায় রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
এই আয়াতগুলো মুসলিমদের জন্য বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি আস্থা এবং যে কোনও পরীক্ষা বা ত্যাগের জন্য আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।